অণুগল্প: ক্ষয়
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
একাকী নির্জনে। 'কিছুক্ষণ' বৃদ্ধাশ্রমের দোতলার বারান্দায় চেয়ারে বসে লোপাদি। দূর থেকে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের সন্ধ্যারতির আওয়াজ। নীচে গঙ্গার মতোই লোপাদির মনেও আবেগের জোয়ারের ছলাৎছল।
লোপামুদ্রা ব্যানার্জী। উত্তরপাড়ার গার্লস স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা। স্বামী ছিলেন ব্যাঙ্ক কর্মী। একমাত্র সন্তানকে জীবনের রামধনুর রঙে বড় করেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার অর্ক অফিসেই জীবনসঙ্গী খুঁজে পেল।ছেলের সুখের কথা ভেবে স্বামী স্ত্রী মেনে নিলেন সম্পর্কটা। কিন্তু ছ'মাস পরই হল তিক্ততা শুরু। বয়স্ক বাবা মার স্থান হলো চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরে। একরাতে স্বামীর বুকের ব্যথা উঠলে ছুটলেন লোপাদি ছেলের ঘরে। বন্ধ দরজায় ব্যাকুল আঘাত ওপার থেকে নির্লিপ্ততায় ফিরে এলো। স্বামী কোলে মৃত্যু দেখলেন লোপাদি। সকালে কাজের মেয়ের চিৎকারে জানল সকলেই। প্রতিবাদের ঝড় উঠল। নির্বাক লোপাদি যেন নীলকন্ঠ ! জীবন মন্থন থেকে কখন যে গরল উঠে এসেছে ! শ্রাদ্ধের কাজ মিটতেই উত্তর পাড়ার খেয়াঘাটের পাশে এই বৃদ্ধাশ্রমে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে !
দীর্ঘ পনেরো বছর পর আবার নাতির মুখ দেখা। জন্মদিনে বাবা-মাকে না জানিয়ে দিদুনের কাছে চলে এসেছে অনুভব। জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে, কাঁদিয়েছে।এক আবেশী বিকেল কাটিয়ে যাবার সময় আগুনে চোখে বলে গেছে,ও বাবার মতো বড়ো হলে মাকেও বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে। প্রিয় জন থেকে দূরে একাকী জীবন যন্ত্রণার মধ্যে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন